Social Icons

সোমবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৮

৫ লাখ অবাঙালি পুনর্বাসনের পাঁয়তারা

পার্বত্য চট্টগ্রামে হঠাৎ পাঁচ লাখ অবাঙালি পুনর্বাসনের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সরকার গঠিত একটি টাস্কফোর্স এই অবাঙালিদের পুনর্বাসনে তাদের তালিকা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য অনুমোদন দিয়েছে।

পার্বত্য শান্তিচুক্তির আলোকে ২০০৯ সালে ২১ পরিবারকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শেষ হয়েছিল। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আকস্মিকভাবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে পুনর্বাসনের চেষ্টা শুরু হয়।
‘ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন’ টাস্কফোর্সের নবম সভা সম্প্রতি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সভায় টাস্কফোর্স সরকারি অর্থায়নে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ৮১ হাজার ৭৭৭ উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনে অনুমোদন দেয়। সভায় পুনর্বাসনের জন্য ভারত থেকে প্রত্যাগত ২১ হাজার ১০০ শরণার্থী পরিবারের তালিকাও অনুমোদন দেয়া হয়। এ দুই শ্রেণীর এসব পরিবারকে পুনর্বাসন করা হলে প্রায় পাঁচ লাখ অবাঙালি পুনর্বাসনের আওতায় আসবে।
স্থানীয় বাঙালি সম্প্রদায় ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে হটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব আসন আঞ্চলিক দলগুলোর দখলে নেয়ার নানামুখী তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

এর মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের পাহাড়ের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর আঞ্চলিক দলে যোগ দিতে বাধ্য করা। আঞ্চলিক দলে যোগ না দিলে জাতীয় পর্যায়ের দলগুলোর নেতাকর্মীদের ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। অস্ত্রের মুখে প্রাণভয়ে তাই এসব নেতাকর্মী আঞ্চলিক দলে যোগ দিচ্ছেন। অবাঙালি পুনর্বাসনের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টাকে এরই নতুন তৎপরতা হিসেবে দেখছেন স্থানীয় বাঙালিরা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে চারটি আঞ্চলিক দল রয়েছে। এগুলো হল: জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-মূল), জেএসএস সংস্কারপন্থী, ইউপিডিএফ (মূল), ইউপিডিএফ (সংস্কারপন্থী)।

শান্তিচুক্তির পর গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা সরকারপন্থী থাকলেও এখন তিনি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। পার্বত্য এলাকায় জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক বাঙালি হলেও হঠাৎ অবাঙালি পুনর্বাসন নতুন উত্তেজনাও তৈরি করেছে।

সূত্র জানায়, শান্তিচুক্তির পর টাস্কফোর্সে একজন বাঙালি সদস্য ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল অভ্যন্তরীণ বাঙালি উদ্বাস্তুদের বিষয়টিও একই সঙ্গে সমাধান করা। কিন্তু সন্তু লারমা সেই সদস্যের ব্যাপারে আপত্তি দেন এবং সেই টাস্কফোর্সকে কাজ করতে দেননি। পরে তাকে বাদ দিয়ে নতুন করে কমিটি করা হয়। এই কমিটি ভারত প্রত্যাগত ১২ হাজার ২২২ পরিবারকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পুনর্বাসন করে। এরপর সরকার শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি রিপোর্টে শান্তিচুক্তির এই ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত বলে ঘোষণা করেছে। অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসনও শেষ হয়েছে।
https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন